বিশ্বমঞ্চে তিনি একজন অতুলনীয় ব্যক্তি এবং তিনি বিশ্বের নোবেল জয়ীদের একজন।
একটি উদ্ভাবনী আর্থিক প্রতিষ্ঠান, যা দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আর্থিক স্বনির্ভরতা নিশ্চিত করতে কাজ করে। ১৯৭৬ সালে ড. মুহাম্মদ ইউনুসের উদ্যোগে এটি যাত্রা শুরু করে এবং ১৯৮৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি স্বতন্ত্র ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
ব্যাংকটির প্রধান লক্ষ্য ছিল প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাইরে গিয়ে এমন মানুষের কাছে অর্থনৈতিক সেবা পৌঁছে দেওয়া, যারা সাধারণত ব্যাংকের সহায়তা পায় না। এটি জামানত ছাড়াই ক্ষুদ্রঋণ প্রদান করে এবং বিশেষভাবে নারীদের আর্থিক ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করে।
গ্রামীণ ব্যাংকের মডেলটি শুধু আর্থিক সহায়তা নয়, বরং দারিদ্র্য দূরীকরণ, নারীর ক্ষমতায়ন এবং সামাজিক পরিবর্তনে অনন্য অবদান রেখেছে। এর সাফল্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করে, এবং ২০০৬ সালে ড. মুহাম্মদ ইউনুস ও গ্রামীণ ব্যাংক যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার অর্জন করে।
বিশ্বজুড়ে গ্রামীণ ব্যাংককে সামাজিক উন্নয়নের একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং এটি আজও ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমেপথিকৃৎ।
Muhammad Yunus একজন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ, উদ্যোক্তা, এবং মানবাধিকার কর্মী। তিনি গরিব জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন এবং দারিদ্র্য দূরীকরণে ক্ষুদ্রঋণ ধারণার উদ্ভাবক ও বাস্তবায়নকারী হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিত।
ডক্টর ইউনুসের ক্ষুদ্রঋণ ধারণার মূল ভিত্তি হলো দরিদ্র মানুষের কাছে আর্থিক সেবা পৌঁছে দিয়ে তাদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন করা। ১৯৮৩ সালে তিনি গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন, যা দরিদ্র মানুষের জন্য একটি বিশেষায়িত ব্যাংক। গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রমের মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষ দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ পেয়েছে।
Muhammad Yunus ১৯৪০ সালের ২৮ জুন বাংলাদেশের চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে পড়াশোনা করেন এবং পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।
উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে যান এবং সেখান থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের সময়ে ডক্টর ইউনুসের জীবনে এক গভীর পরিবর্তন আসে। তিনি বুঝতে পারেন, উন্নয়নের জন্য দরিদ্র মানুষের কাছে অর্থনৈতিক সুযোগ পৌঁছানো অপরিহার্য।
তিনি ক্ষুদ্রঋণের ধারণা নিয়ে কাজ শুরু করেন এবং চট্টগ্রামের জোবরা গ্রামে এর পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করেন। এই মডেলের সাফল্যের কারণে গ্রামীণ ব্যাংকের ধারণা দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং বিশ্বের বহু দেশে অনুকরণ করা হয়।
২০০৬ সালে Muhammad Yunus এবং তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। এটি ছিল দারিদ্র্য দূরীকরণে তাঁর যুগান্তকারী অবদানের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।
তিনি তার কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন যে, দারিদ্র্য কোনো ভাগ্যের বিষয় নয়, বরং এটি একটি কাঠামোগত সমস্যা, যা সমাধানযোগ্য। ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পের মাধ্যমে তিনি নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন, যা উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতিতে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনে।
Muhammad Yunus শুধুমাত্র একজন অর্থনীতিবিদ নন; তিনি একজন আদর্শবাদী নেতা, যিনি বিশ্বাস করেন মানবতা এবং সামাজিক ন্যায়ের শক্তিতে।
তাঁর লেখা বই, যেমন “ব্যাঙ্কার টু দ্য পুওর” এবং “বিল্ডিং সোশ্যাল বিজনেস,” বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে এবং নতুন প্রজন্মের উদ্যোক্তাদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। তিনি ‘সোশ্যাল বিজনেস’ ধারণার প্রবক্তা, যা মুনাফার পরিবর্তে সামাজিক সমস্যার সমাধানকে অগ্রাধিকার দেয়।
ডক্টর ইউনুসের কর্মকাণ্ডের জন্য তিনি অসংখ্য আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেনশিয়াল মেডেল অফ ফ্রিডম এবং কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল উল্লেখযোগ্য। তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে কাজ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর দারিদ্র্য নিরসনে নতুন নতুন উদ্যোগ নিয়ে আসছেন।
Muhammad Yunus এর জীবন ও কর্ম প্রমাণ করে যে, একজন ব্যক্তির দূরদৃষ্টি, উদ্ভাবন এবং মনোবল দিয়ে কোটি মানুষের জীবন পরিবর্তন করা সম্ভব।
তিনি কেবলমাত্র অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রতীক নন, বরং একটি মানবিক পৃথিবী গড়ার প্রতিশ্রুতিরও প্রতীক। ডক্টর ইউনুসের দর্শন এবং উদ্যোগ আমাদের শেখায় যে, দারিদ্র্যের চক্র ভেঙে দেওয়ার মাধ্যমে একটি ন্যায্য ও সমৃদ্ধ সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব।
সংক্ষেপে, ডক্টর ইউনুস শুধুমাত্র বাংলাদেশ নয়, বরং গোটা বিশ্বের জন্য এক অনন্য ব্যক্তিত্ব, যিনি অর্থনীতি এবং সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে এক অমর উদাহরণ।
সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ যেমন লেখক, শিক্ষক, বিজ্ঞানী, উদ্যোক্তা, ক্রীড়াবিদ, এবং অন্য পেশাজীবীদের সহ বিভিন্ন কোম্পানি বা ব্র্যান্ড এর গল্পও তুলে ধরা হয়।